মানুষ কেন বৈদ্যুতিক শক খায়?
বিদ্যুৎ কি?
পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন প্রবাহকালে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে মূলত বিদ্যুৎ বলে।
আমরা কেন বৈদ্যুতিক শক খাই?
আমাদের দেহের শতকরা ৩ ভাগের এক ভাগ পানি।আমরা যে পানি পান করি তার ভিতরে বেশিরভাগ অংশ থাকে আয়ন (সোডিয়াম আয়ন, পটাশিয়াম আয়ন, ক্লোরাইড আয়ন অন্যতম। )জার কারনে আমাদের দেহ বিদ্যুৎ পরিবাহীর মত আচরন করে।
পাখিরা কেন বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয় না?
পাখিদের পায়ে ক্যারোটিন থাকে চামরায়ও কিছুটা থাকে তাই তাদের শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না।তৃতীয় পরিবাহক নেই। তাদের পালক বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাই পাখি বৈদ্যুতিক শক খায় না।
আমরা কেনো বৈদ্যুতিক শক খাই? আমি নিশ্চিত জীবনে একবার হলেও আপনার মনে এই প্রশ্ন টার উদয় হয়েছে । বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার সাথে আমরা বেশ ভালো ভাবেই পরিচিত। বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক শকে আহত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত। এই সকল কিছু জানার ও বোঝার আগে আমাদের জানতে হবে "বিদ্যুৎ কি?"
সূচিপত্র
- বিদ্যুৎ কি?
- বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ কোন মাধ্যমে পরিবাহিত হয়?
- আমরা কেন বৈদ্যুতিক শক খাই?
- বিদ্যুৎ ধাতব মাধ্যমে প্রবাহিত হয় কিন্তু অধাতব মাধ্যমে প্রবাহিত হয় কিভাবে?
- প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পরা থাকলে বিদ্যুৎ পরিবাহিত কেন হয় না?
- পাখিরা কেন বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয় না?
- ভেজা হাতে কেন আমাদের শক খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে?
- পুড়ে যাওয়া, শ্বাস বন্ধ হওয়া কেন হয়?
- বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হলে করণীয় কি?
- সতর্কতা
বিদ্যুৎ কি?
পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন প্রবাহকালে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে মূলত বিদ্যুৎ বলে।
বিদ্যুৎ কোন মাধ্যমে পরিবাহিত হয়?
আমরা জানি বিদ্যুৎ কোনো মাধ্যম ছাড়া চলাচল করতে পারেনা।বিদ্যুতের চলাচলের জন্য অবশ্যই একটি সুপরিবাহী মাধ্যম দরকার। সুপরিবাহী মাধ্যম বলতে বোঝায় এমন মাধ্যম যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিনা বাধায় পরিবহন করতে পারে।যার মধ্যে রয়েছে ধাতব পদার্থ সমুহ।অনান্য আরো পদার্থে বিদ্যুৎ পরিবহন হলেও ধাতব পদার্থেই বিদ্যুৎ পরিবহন সবচেয়ে ভালো হয়। যার কারনে আমরা বিদ্যুৎ পরিবহনের ক্ষেত্রে ধাতব পদার্থ ব্যাবহার করে থাকি।আমরা মূলত তামার তার ব্যাবহার ব্যাবহার করে থাকি বিদ্যুৎ পরিবহনের ক্ষেত্রে।অনান্য ধাতু ব্যাবহার করতে চাইলেও করা সম্ভব কিন্তু অন্যান্য ধাতু ব্যাবহার করলে সেক্ষেত্রে দেখা যায় খরচ নাগালে বাইরে চলে যায় এবং অন্যান্য সকল পদার্থ খুব একটা সহজলভ্যও না এছাড়া তামার তারে বৈদ্যুতিক লসও খুব কম হয় যে কারনে আমরা তামার তার ব্যাবহার করে থাকি।
আমরা কেন বৈদ্যুতিক শক খাই?
এছাড়াও বিদ্যুৎ পরিবহনের ক্ষেত্রে সবথেকে যে জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে বিভব পার্থক্য বা পটেনশিয়ালিটি থাকা।উদাহরণ সরূপ বলা যায় একটা বোতল ছিদ্র করে পানিতে ডুবিয়ে রাখছে ঐ ছিদ্র দিয়ে পানি বের হবে না।ঠিক একই ভাবে বিভব পার্থক্য না থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে না।উৎস থেকে আসা বিদ্যুৎের প্রবাহমাত্রা যদি আমাদের শরীরে থাকা বিদ্যুৎ থেকে কম হয় তাহলে আমরা শক অর্থাৎ তারিৎপৃষ্ঠ হই না।কিন্তু প্রবাহমাত্রা বেশি থাকলে তরিৎপৃষ্ঠ হই না।
বিদ্যুৎ ধাতব মাধ্যমে প্রবাহিত হয় কিন্তু অধাতব মাধ্যমে প্রবাহিত হয় কিভাবে?
প্রশ্নটা অত্যন্ত যৌক্তিক। অনেক্ষেত্রে অপধাতুও বিদ্যুৎ পরিবহন করে যদিও মানবদেহ অপধাতু নয়।বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য পরিবাহকের আয়ন থাকা জরুরি। মানবদেহ একটা রাসয়নিক কারখানা।আমাদের শরীরে ২৬ টা মৌলিক পদার্থ বিদ্যমান।সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড সহ বিভিন্ন পদার্থ বিদ্যমান যা পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয়।যার ফলে আমাদের শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পরা থাকলে বিদ্যুৎ পরিবাহিত কেন হয় না?
আপনি খালি পায়ে থাকলে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয় কেননা তখন আপনি ২য় পরিবাহক হিসেবে থাকেন আর মাটি থাকে ৩য়। তাই অতি সহযে বিদ্যুৎ ২য় মাধ্যম থেকে তৃতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে বর্তনী পূর্ণ করে কিন্তু প্লাস্টিক বিদ্যুৎ কুপরিবাহি হওয়ায় ৩য় মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবেশ করতে পারে না।যার ফলে বর্তনী পূর্ণ হয় না। তাই স্যান্ডেল(প্লাস্টিকের) পরা থাকলে সাধারণত বিদ্যুতপৃষ্ঠ হয় না।
পাখিরা কেন বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয় না?
![]() |
ছবিঃ ইলেক্ট্রিক তারে পাখি |
পাখিদের পায়ে ক্যারোটিন থাকে চামরায়ও কিছুটা থাকে তাই তাদের শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না।তৃতীয় পরিবাহক নেই। তাদের পালক বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাই পাখি বৈদ্যুতিক শক খায় না।
ভেজা হাতে কেন আমাদের শক খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে?
কারণ পানিতে পদার্থ অতিদ্রুত আয়নিত হতে পারে। পানির কারণে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ রোধ কমে যায়।যার ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহের মান বেড়ে যায়। এজন্য ভেজা হাতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকা উচিত।
পুড়ে যাওয়া, শ্বাস বন্ধ হওয়া কেন হয়?
যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ বেড়ে যায় তখন অর্থাৎ বিভব বেশি থাকে তখন অতিরিক্ত রোধে তাপের সৃষ্টি হয়। এই তাপে শরীর পুরে যায়।চামরা পুরে যাওয়ার কারণে রোধ কমে যাবে এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ বেড়ে যাবে যার ফলে স্নায়ুতন্ত্রে বাধার সৃষ্টি হবে। যার ফলে হৃদপিণ্ডে সিস্টোল ও ডায়াস্টল উল্টাপাল্টা হবে অর্থাৎ রক্ত পাম্প উল্টা পাল্টা হবে। যার প্রভাব ফুসফুসেও পরবে। তাই শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, শরীর পুরে যাওয়া হয়ে থাকে। যদিও ০.২ আ্যম্পিয়ারের এর বেশি মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলেই মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হলে করণীয় কি?
- মেইনসুইচ অফ করে দিতে হবে।
- বন্ধ না করা গেলে বাশ বা শুকনো কাঠ দিয়ে বারি দিতে হবে।
- হাত পায়ের তালু মালিশ করতে হবে যাতে রক্ত চলাচল সহজ হয়।
- জিহ্বা, চোখ উল্টে গেছে কিনা দেখতে হবে।
- হৃদস্পন্দন হচ্ছে কিনা লক্ষ্য করতে হবে যদি না হয় কিংবা আস্তে আস্তে হয় তাহলে বুকের উপর চাপ দিতে হবে।
- শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কৃত্রিম ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
- বুক, গলা, কোমরের কাপড় ঢিলা করে মাটিতে শুয়িয়ে দিতে হবে যাতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে চলে যায়।
- দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
- যে কোন অবস্থায় বিচলিত হওয়া চলবে না।
আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ভাষণ – জাতীয় শোক দিবসের ভাষণ
সতর্কতা
- অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হবে।
- অনিরাপদ লাইন দ্রুত বদলে ফেলতে হবে।
- বৈদ্যুতিক তার, খাম্বা, কারখানা সাধারণ জনপদের হাতের নাগালে রাখা যাবে না।খাম্বা অপরিবাহী পদার্থ হওয়া,তার অপরিবাহী পদার্থে পেঁচানো হওয়া, কারখানা লোকালয় থেকে দূরে স্থাপন করা।
- অনিরাপদ প্লাগ, সুইচ বদলে ফেলতে হবে।
- বিদ্যুৎ অফিসের নাম্বার সংগ্রহে রাখতে হবে।
Join the conversation